আপনি যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠেন তখন সর্বপ্রথম কি করে থাকেন? আমার ধারণা অধিকাংশ লোকই মোবাইল নিয়ে ইন্টারনেটে স্ক্রল করা শুরু করে। আবার আপনি যখন অফিসে যান সবার আগে কোন কাজটি করেন? হয়তো আপনি মেইলের রিপ্লে দিয়ে থাকেন বা কোন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ চেক করে থাকেন।
আমরা সারাদিন যেসব কাজ করে থাকি সেগুলো হয়তো প্রাইরোটি বেইজড করি না। কোন কাজটা আগে করা দরকার আর কোনটা পরে অনেক সময় এইসব নিয়ে গোল-মাল পাকিয়ে বসি।
যাইহোক এইসব সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আমি কথা বলবো অনেক প্রচলিত একটা টেকনিক পারেটো প্রিন্সিপাল বা ৮০/২০ রুলস নিয়ে। আমরা যে কাজই করি না কেন, এই টেকনিক টা আমার মতে সবারই শিখে রাখা জরুরী। কেননা এটা আমাদের দৈন্দদিন জীবনের কাজগুলোকে সহজ করে তুলবে, লাইফে কোনটা ইম্পর্টেন্ট আর কোনটা ইম্পর্টেন্ট না তাই আইডেন্টিফাই করতে সাহায্য করবে।
Table of Contents
পারেটো প্রিন্সিপাল কি?
১৮৯৬ সালে ইতালীয় অর্থনীতিবিদ ভিলফ্রেডো পেরেটো (Cours d’économie politique ) নামে একটি রিসার্স পেপার পাবলিশ করেন। পরবর্তীতে এই রিসার্স পেপারের ওপর ভিত্তি করে, রোমানিয়ান ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টেন্ট যার নাম জুশেফ জুরান তিনি পারেটো প্রিন্সিপাল আবিষ্কার করেন।
এই রিসার্স পেপারে দেখানো হয়েছিলো যে, ইটালির ৮০% জমির মালিক এখানে বসবাস করা ২০% ইতালিয়ানদের। মানে স্বল্প সংখ্যক লোকেদের হাতে অধিক পরিমাণ সম্পদ। যেমনটা বর্তমান সময়ে, এখন বিশ্বের ৮০% সম্পদ ২০% ক্ষমতাবান লোকেদের হাতে।
পারেটো প্রিন্সিপাল কে পারেটো রুল বা ৮০/২০ রুলস বলেও জানা হয়। এই রুলসের মূল কথা হচ্ছে, আপনার সফলতার ৮০% আসে আপনার ২০% কাজ থেকে। অর্থাৎ আপনি সারাদিনে ১০০ টি কাজ করলেন এবং আপনার সফলতার মানদন্ড যদি হয় ১০০% তাহলে সেই ১০০% এর ৮০% সফলতা আসে আপনার ২০% কাজ থেকে।
পারেটো প্রিন্সিপাল এর কিছু এক্সাম্পল
- বড় বড় কোম্পানীতে এই রুলস এপ্লাই করা হয় কেননা এতে করে তাঁরা বুঝতে পারে কোথায় তাঁদের বেশি এফোর্ট দেওয়া উচিত এবং কোথায় কম এফোর্ট দেওয়া উচিত। যেমন: একটি কোম্পানীর হাজার হাজার ক্লায়েন্ট থাকলেও সবাই কিন্তু সমপরিমাণ টাকা পে করেনা। এক এক জন ক্লায়েন্ট সার্ভিস ভেদে একেক রকম টাকা পে করে। সাধারণত দেখা যায় বেশির ভাগ কোম্পানীতে মেইন প্রফিট আসে খুব স্বল্প সংখ্যক বড় ক্লায়েন্টদের কাছে থেকে। অর্থাৎ রুলস অনুযায়ী ২০% ক্লায়েন্ট থেকে ৮০% প্রফিট আসে।
- আপনি খুব ভোরে উঠে পড়তে বসেছেন এবং সারাদিনে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ ঘণ্টা পড়লেন। এখন দিনশেষে যদি আপনি হিসেব করতে বসেন তাহলে দেখতে পারবেন, সকালে উঠে প্রথম ২-৩ ঘণ্টায় আপনার ভালো পড়া হয়েছে সারাদিনের বাকি ৭-৮ ঘণ্টা থেকে। প্রথমের ওই ২-৩ ঘণ্টায় আপনি বেশি মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন যার কারণে আপনার প্রোডাক্টিভিটি ভালো হয়েছে। তাহলে এখানেও আপনার সারাদিনের পড়ার ৮০% ভালো রেজাল্ট আসলো সকালের ওই ২০% সময়ের ওপর।
- আবার আপনি মার্কেটিং এর জন্য বেশ কিছু ক্যাম্পেইন সেট করেছেন, সবগুলো ক্যাম্পেইন কিন্তু আপনাকে সমপরিমাণ রেজাল্ট এনে দিবে না। কোন ক্যাম্পেইন ফেইল করবে, কোনটা উাউন হবে, আবার কোনটা মিড বরারবর থাকবে। বেশির ভাগ ক্যাম্পেইন ই ফেইল করবে। কিন্তু আবার দেখতে পারবেন অনেকগুলো ক্যাম্পেইনের মধ্যে ১-২ টা ক্যাম্পেইন সফল হয়েছে এবং সেগুলো সেল এনে দিচ্ছে, যার ফলে বাকি ক্যাম্পেইনগুলো ফেইল করলেও সমস্যা হচ্ছে না। এখানেও কিন্তু ৮০/২০ রুলস এপ্লাই হচ্ছে, মানে আপনার টোটাল সেলর্সের ৮০% আসছে ২০% ক্যাম্পেইন থেকে।
আপনি যেকোন কাজেই এই বিষয়টি দেখত পারবেন, ওই কাজের সফলতা ৮০% আসে ২০% কাজ থেকে। এখন এই বিষয়টি যদি আমরা বুঝতে পারি এবং আমাদের লাইফে এপ্লাই করা শুরু করি তাহলে সফল হবার সম্ভবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।
যেহেতু ২০% ক্লায়েন্ট থেকে কোম্পানীর ৮০% প্রফিট আসে তাই ওই কোম্পানী যদি সেই ২০% ক্লায়েন্টদের প্রতি বেশি নজর দেয় তাহলে কিন্তু এখানে আরো ইম্প্রুভমেন্ট করা সম্ভব। আবার সকালে পড়তে বসলে যেহেতু প্রোডাক্টিভিটি ভালো হচ্ছে তাই দিনের অনান্য সময়ের থেকে সকালে বেশি সময় দিলে কিন্তু আরো ভালো করা সম্ভব। যে ২০% ক্যাম্পেইন থেকে ৮০% সেলস আসছে, সেই ক্যাম্পেইনে যদি আরো বেশি ফোকস এবং বাজেট দেওয়া হয় তাহলে সেলর্স আসার সম্ভবনা কিন্তু আরো বেড়ে যেতে পারে।
আসলে এই রুলস টা শুধু এই এক্সম্পলের মধ্যেই সিমাবদ্ধ নয়, আপনি সারাদিনের যেসব কাজ কর্ম করেন তা যদি দিনশেষে ভালোভাবে লক্ষ্য করেন দেখতে পারবেন এমন অনেক কাজ আছে আপনার সফলতার জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না কিন্তু ওই কাজগুলোতেই বেশি সময় ব্যায় করেছেন। আর যে কাজগুলো আপনাকে সফলতার দিকে ধাবিত করবে সেখানে কম সময় ব্যায় করছেন। কিন্তু বেছে বেছে যদি সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেই বেশি ফোকার্স করা যেত তাহলে সফল হবার পথ কিন্তু আরো সহজ হয়ে যেত।
সবশেষে বলতে চাই, আমাদের সবারই উচিত ওই ২০% কাজগুলোকে খুজে বের করা এবং সেখানে বেশি এফোর্ট দেওয়া, এতে করেই আমরা সফলতার দার প্রান্তে পৌঁছাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।